Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

খাবার ও জীবনাচরণে স্বাস্থ্যঝুঁকি

অতিথিপরায়ণতা আর রসনা বিলাসিতায় আমাদের সুনাম বিশ্বজুড়ে। এখনও দিনের অধিকাংশ সময়জুড়ে আমাদের চিরায়ত পারিবারিক রান্নাবান্নায় দাদি, নানি, মা, খালারা রান্নাঘরে  কাটান। মাটির চুলা জ্বালানোর জ্বালায় তাদের চোখের পানি আর নাকের পানি একাকার হয়ে যায়। চুলার কালো-ধূসর ধোঁয়া খেতে খেতে অকাতরে  তারা ভোজনবিলাসীদের জন্য ‘কচি পাঁঠা, বৃদ্ধ মেষ/দৈইয়ের আগা, ঘোলের শেষ’ তৈরি ও পরিবেশনে হেসে খেলে হেঁসেলের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে জীবন যৌবন অতিবাহত করেন। শেষকালে কাশি- হাঁপানিসহ  নানা  কষ্টকর রোগে ধুঁকে ধুঁকে ভোগা কপালের লিখন মনে করেন। বিজ্ঞজনের পরিসংখ্যান মতে, না খেয়ে যত না মানুষ মরে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি মরে খেয়ে বা বেশি খেয়ে।
 

গোপাল ভাঁড়ের ভাষ্য : ‘খাবার শুরু তিক্ত দিয়ে, সমাপ্তি মিষ্ট দিয়ে’। এখানে তিক্ততা মানে উচ্ছে বা করলার তিতা। স্বাস্থ্য সচেতন সনাতন প্রথানুসারে কেউ কেউ এখনও সকালে খালি পেটে চিরতা, ত্রিফলাসহ নানা ভেষজের তিক্তকষায় পানীয় অবলীলায় পান করেন। বাঙালি সংস্কৃৃতিতে ‘পহেলা বৈশাখ’ এর নাগরিক ঐতিহ্য ‘পান্তা-ইলিশ’ এখন বেশ সরগরম আইটেম। পান্তা গ্রাম বাংলার আদি ও অকৃত্রিম অনুসঙ্গ। মহার্ঘ্য ইলিশ; তার স্বাদ, জৌলুষ আর সৌরভের চেয়ে, পণ্য হিসেবে বেশি ধন্য। আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ওঠে এসেছে, ১২ ঘণ্টা পানিতে ভেজানো পান্তা ভাতে পুষ্টি উপাদন আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের মাত্রা সাধারণ ভাতের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে যায়। আধুনিক জীবনাচরণের কারণে বেড়ে চলা এসিডিটি, উচ্চ রক্তচাপ,  হৃদরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, নিদ্রাহীনতাসহ নানা রোগ। পক্ষান্তরে ক্ষতিকর সোডিয়ামের পরিমাণ সে হারে কমে আসে। পান্তা যে শতভাগ ভালো, তা নয়। তবে এর দোষ তামাক আর অ্যালকোহলের ক্ষতির মাত্রার তুলনায় গনায় আনাই যায় না।
আমাদের জীবনযাত্রায় তামাকের অবাধ বিচরণ, আর অ্যালকোহল রেখে ঢেকে। বিশ্বে ক্যান্সারের প্রধান কারণ তামকজাত পণ্য। এর মধ্যে আছে ধূমপান এবং জর্দা গুলের মতো তামাক পাতা সরাসরি গ্রহণ। যদিও ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও অজানা। তবু যেসব কারণকে ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা  হয়; তার অন্যতম কারণ তামাক গ্রহণ এবং বদলে যাওয়া জীবনাচরণ। পুরুষদের মুখে ও  ফুসফুসে ক্যান্সারের হওয়ার বড় কারণ ধূমপান। তা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে ধূমপায়ী  বা  অন্য কোন ধোঁয়ার কাছাকাছি থাকার কারণেও মুখে ও  ফুসফুসে ক্যান্সার আক্রমণের শিকার হতে পারে। সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে তিন ভাগের একভাগ ক্যান্সার থেকে নিরাপদে বাঁচা যায়। গ্রামে প্রাচীন বটের মতো যেসব মুরুব্বিজনরা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের ঘরে ঢুকতেই যে ঘ্রাণ নাকে ঢুকবে, তা হলো সাদাপাতা তথা শুকনা তামাক পাতা আর পান সুপারির মঁ মঁ মন মাতানো গন্ধ। শতকরা ৮৫ ভাগ ক্যান্সার হয় তামাক পাতা ব্যবহারের জন্য। এর সাথে অ্যালকোহল যোগে বাড়ে আরও ঝুঁকি। যদিও  মুখে ও গলার ক্যান্সার রোগ; ক্যান্সার, ভাইরাস, রেডিয়েশন বা বংশগত কারণেও হতে পারে। সম্প্রতি (২০১৬-১৭) দেশের সর্বাধিক করদাতার আয়ের প্রধান উৎস জর্দা ব্যবসায়। যার মূল উপাদান প্রক্রিয়াজাতকরণকৃত তামাক পাতা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় জানা যায়, বিড়ি সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যে ৪০০০ এর বেশি ক্ষতিকর উপাদান আছে, যার মাঝে ৪৩টি সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টির সাথে জড়িত। ৩০ ভাগ ক্যান্সারের জন্য দায়ী ধূমপানসহ তামাক সেবন। তাই ২০০৬ সাল থেকে ৪ ফ্রেরুয়ারি বিশ্ব ক্যান্সার দিবস হিসাবে পালন করছে। ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বজুড়ে তামাকের  ব্যবহার কমানোকে উৎসাহিত করার জন্য ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস পালন করে আসছে। জরুরি পদক্ষেপ নেয়া না হলে ২০৩০ সাল নাগাদ  বিশ্বে তামাকজনিত কারণে প্রতি বছর মারা যাবে। আমাদের দেশের আদিবাসী ও গ্রামাঞ্চলে তামাক এবং তামাক সামগ্রীর ব্যবহার  ব্যাপক। পান সুপারিতে মরণব্যাধি ক্যান্সারের উদ্দীপক বিদ্যমান। কারও মতে, পান রুচি বর্ধক, ক্যান্সার প্রতিরোধক। সুপারি  স্ট্রোকসহ নানা রোগ প্রতিকারে সহায়ক। চুনে আছে ক্যালসিয়াম। হাঁড় ও  দাঁত গঠনে যা অপরিহার্য। শরীরে এসিডিটির ভারসাম্যে  তার প্রয়োজন। চা, কফিও  উদ্দীপক। কিন্তু অধিক হারে এসব দেহের জন্য খুব একটা সুখকর নয়।
ভেজা বা আর্দ্র বাসি পচা খাবারে মৃতজীবী  ছত্রাকের আফলা টক্সিন নামের বিষ অধিক্ষেপের সম্ভাবনা  প্রচুর। চাল, গম ভুট্টা ১২ শতাংশ বেশি আর্দ্রতায় বেশ কিছু দিন  থাকলে  তাতে আফলা টক্সিন অধিক্ষেপ পড়তে পারে। সাধারণভাবে পান যে ভেজা পাত্রে  মুড়িয়ে রাখা হয় তাতে দু-একটি পাতা পচে মৃতজীবী ছত্রাকের বাহনের কাজ করে। আর আমাদের মাঝে যারা বেশি পান খান তাদের বেশ একটি অংশ কাঁচা সুপারি পছন্দ করেন। কেউ কেউ আবার বেশ কয়েক দিন পানিতে ভিজিয়ে মজা গন্ধযুক্ত সুপারি পানের সাথে চিবানো পছন্দ করেন। তাছাড়াও পাকা সুপারি কাটার সময় দোকানিরা  কাটার সুবিধার জন্য সুপারি নরম রাখতে আর অসাধু বেপারিরা ওজন বাড়াতে সুপারিকে ভিজিয়ে রাখে। তাতে সাদা, মেটে বা সবুজ রঙের  আফলা টক্সিন/ফাইটো টক্সিন জন্মানো বিচিত্র কিছু নয়।
আধুনিক জীবনে অতিরিক্ত উচ্চ ক্যালরিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারে মুখরোচক করার জন্য চাইনিজ লবণ, ঘন চিনি ও  অতি ভাজা তেলের পরিমাণ থাকে প্রচুর। তাতে ফাইবার থাকে খুবই কম। কোমল পানীয় এবং মিষ্টিজাতীয় খাবারে চিনির বাড়তি ব্যবহার দেহের ওজন ও স্থূলতা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। রেডমিট বা  লাল মাংশ অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়াও  স্বাস্থ্যঝুঁকির অন্যতম কারণ। মাছ, হাঁস মুরগির মাংশ বা আমিষ  নিরাপদ। তাই গ্রাম বাংলার বিধবা এবং বয়স্করা অধিক তেল-মশলা ও প্রাণিজ আমিষ যথাসম্ভব এড়িয়ে অনেকটা  নিরামিষভোজী। যা অধুনা পুষ্টি বিশেষজ্ঞগণের মতাদর্শের সাথে দারুণভাবে মিলে যায়। পুষ্টিকর খাবারও আজকাল নানা দোষে দুষ্ট। ইঙ্গ-পাক আমলের শোষণের পরেও ষাটের দশক অবধি, গ্রামের সাধারণ কৃষকের ছিল গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ। জমিতে যেসব ফসল ফলতো সার বলতে ছিল গোবর,  চুলার ছাই, খড় পেড়ানো  আর সরিষার খৈল। অর্থকরী ফসল পাটের পাতা ও ধানের নাড়া ‘প্রকৃতির লাঙ্গল’ কেঁচো  জমিতে পচিয়ে  জমির উর্বরতা বাড়িয়ে দিত। শিয়ালের লোভ  ছিল গৃহস্থের খোয়াড়ের হাঁস মুরগি। জমিতে ইঁদুর  খেকো পেঁচা বসার জন্য কলা গাছ এবং পোকা দমনে খাদক পাখির  বসার জন্য কঞ্চি পুঁতে দেয়া হতো। পশুপাখিদের ভয় দেখাতে বসানো হতো কাকতাড়ুয়া। ফসল তোলার পর নাড়া পুড়িয়ে উফরাসহ নানা রোগজীবাণু ও পোকার বংশ ধংশ করে মাটি শোধন এবং  পটাশ সারের জোগান দেয়া হতো। পর্যায়ক্রমিক ফসল আবাদ মাটি ও পরিবেশবান্ধব ছিল। অগ্রহায়ণের নবান্নের চাল কোটা হতো ঢেঁকিতে । ঢেঁকিছাঁটা  চালে  থেকে যেতো  পুষ্টি উপাদন। তা ছিল অরগানিক কৃষির স্বর্ণ যুগ, আর আবাহমান বাংলার প্রকৃত রূপ।

বর্তমানে অরগানিক আবাদের বদলে অধিক ফলন আর মুনাফার আশায় অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ডে নির্বিচারে রাসায়নিক  সার, বালাইনাশক, হরমোন প্রভৃতি রাসায়নিকের ব্যবহার করে মাটি, পানি, বায়ু ও ফসলকে ক্রমশ বিষাক্ত করে তুলছি। ইউরিয়ার বর্জ্য মিশে যাচ্ছে  জলাশয় ও ভূতলের পানিতে। বাড়ছে মিথেনসহ নানা বর্জ্য। পুষ্টি জোগানোর জন্য পয়সা দিয়ে  শাকসবজি, মাছ মাংশ, ফলফলাদি কিনছি। খাচ্ছি বিষ। পানির অপর নাম জীবন। আমাদের  শরীরের বিপুল অংশ পানি। বেদ, বাইবেল, কোরআন ধর্মগ্রস্থে পানি দিয়ে পবিত্রতার বর্ণনা আছে, আছে পানি নিয়ে নানা বাণী ও কাহিনী। মিথ যুগের ইলিয়ড, ওডিসি,  গিলগিমিশ, মহাভারত,  রামায়ণ, শাহনামা প্রভৃতি মহাকব্যে এমনকি স্মরণকালের মেঘনাথ বধ, কারাবালা গ্রন্থেও পানির সাথে মানুষের সম্পর্ক এসেছে নানাভাবে। ধর্মীয়ভাবে,  মুসলমানের কাছে জমজমের পানি এবং হিন্দুদের কাছে গঙ্গাজল মহাপবিত্র। বাস্তব জীবনে খাদ্য পুষ্টির অন্যতম উপকরণ পানি। পৃথিবীর শতকরা ৭৭ ভাগই পানি। এ পানির অতি, অতি  ও অতিখুদে অংশ আমাদের জীবনধারণে অতিব প্রয়োজনীয়। তাও  নানা  দূষণ  আমাদের  নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কৃষিতে, শিল্পে ও জীবনযাত্রার কাজে চাহিদার অতিরিক্ত হারে ভূতলের পানি উত্তোলন চলছে। মাটির স্বল্পতলের পানিতে আর্সেনিকসহ বিভিন্ন ভারি ধাতবলবণ মিশে পানিকে বিষাক্ত করে তুলছে। অন্যদিকে কলকারখানার বর্জ্যে মাটি, পানি, বায়ু তথা পরিবেশ হচ্ছে সব প্রাণীর বাসের অযোগ্য। নদী ও জলাশয়ের পানি তলানিতে, সাগরের পানি বাড়ছে। আফ্রিকা ও ভারতে খাবার পানির জন্য মেয়েরা যোজন যোজন পথ পাড়ি দেয়। অনেকের ধারণা, পরবর্তী মহাযুদ্ধ হবে পানির দখলদারিত্ব নিয়ে। পবিত্র কোরআনের  ৬৭তম সুরা মুলকের ৩০তম আয়তে বলা আছে, যদি তোমাদের পানি ভূগর্ভের গভীরে চলে যায়, তবে কে তোমাদের সরবরাহ করবে পানির  স্রোতধার।
যানবাহন, কলকারখানার ধোঁয়ার সিসা, কার্বন প্রভৃতি  গ্যাসবায়ু দূষণ বাড়িয়ে আয়ুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভূমি ও বন উজার করে বাড়াচ্ছি কার্বন, উষ্ণতা, সাগরের পানির তল। কমাচ্ছি অক্সিজেন, জীব বৈচিত্র্য, খাদ্য শৃঙ্খল, অনবায়নযোগ্য খনিজ। এয়ারকন্ডিশনার  ও  ফ্রিজার  থেকে  বেরুচ্ছে সিএফসি গ্যাস। দেয়ালের  ও নিত্য ব্যবহার্য্য প্রসাধন  থেকেও  বিচ্ছুরিত হচ্ছে  রেডনসহ কত অজানা বিষাক্ত উপকরণ। অদৃশ্য শত্রুর মতো আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে। মেলা, জনসভা, পর্যটন ও বনভোজন জনসমাগমে এমন কি বনবাঁদারে বা নদীতের পেট্রোকেমিক্যাল সামগ্রীর জঞ্জালে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে চলছে।  গবেষকদের তথ্যানুসারে পাখির ডিম পাড়া, মৌমাছির ফুলে পরাগায়ন, প্রাণিদেহে বৈকল্যতে চৌম্বকীয়-তড়িৎ ব্যবস্থাপনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ই-বর্জ্য সামনের দিনের আরেক আপদ। সব ভেষজ যে নিরাপদ তা নয়। অতিরিক্ত চা, কফি, পান, সুপারি অপকারী ভেষজের মতো সুস্থতাকে দারুণভাবে ব্যহত করতে পারে। ভেজাল  খাবার ও  ওষুধ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের বদলে  রোগ ও যমের দোরগোড়ায় নিয়ে যায়। খাবার আগে হাত ধোয়া, নিরাপদ পানি ব্যবহার, খাবার ঢেকে রাখা, পচা-বাসি খাবার পরিহার, আগে রান্না করা খাবার গরম করে নেয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তবে, আইসক্রিম  বা দই মাঠা এ নিয়মের বাইরে। যা  আমাদের রোগ ব্যাধি থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। এসবের ছোটখাটো অবহেলা পরে অপরিমেয় ক্ষতির দ্বার প্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।

চিকন দেহ মোটাতাজাকরণ, ওজন ও স্থূলতা হ্রাস, অনিদ্রা দূরীকরণ, বয়স ও রূপলাবণ্য ধরে রাখা, চুল পাকা  পড়া   ও পাকা রোধ, যৌবন ধরে রাখা, হজম, গ্যাস্ট্রিক, বিষন্নতা তাড়ন, স্ফূর্তি আনা প্রভৃতির জন্য কুখাদ্য, কুপণ্য মুড়ি-মুড়কির মতন খাদ্যের চেয়েও  বেশি দামে বিক্রয় হচ্ছে। যেহেতু এর চাহিদা বের্শি তাই তাতে ভেজালের পরিমাণও বেশি। অনেক সময়ে অসাবধানবশত তেল ভেবে কীটনাশক খাবারের সাথে মেশানো, রোগের ওষুধ মনে করে, তার্পিন, কেরোসিন, কীটনাশক বা অখাদ্য  রোগীকে খাওয়ানো বা কোন কারণে জীবনের প্রতি অনীহার বশবর্তী হয়ে  তা খেয়ে বিপদ ডেকে  আনে। অথচ রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ, আদা, দারুচিনি, জিরা, মৌরি, তাজা দেশি শাকসবজি ও ফলমূলে অ্যান্টিঅক্সিডেটসহ অনেক দ্রব্যগুণ বিদ্যমান, যা ক্যান্সারসহ নানা রোগ নিরাময়সহ সুস্বাস্থ্যের  জন্য উপকারী। সাধারণ বাদামি ও সিদ্ধ  চালে যে পুষ্টি ও স্বাদ; আতপ ও পলিশ করা সাদা চালে সে পুষ্টি ও স্বাদ অনেক কম। পেকে যাওয়া মটরশুঁটিতে সবুজ রঙ, বিস্কিট, মিষ্টি, দই  আর ভাতে জর্দায় কৃত্রিম রঙ, মরা মাছের কানকোতে লাল রঙের প্রলপ এখন গা সহা। কিস্তু এ রঙের খেলায় যা ভয়ানক, তা হলো এসব কৃত্রিম রঙ অধিকাংশই  কমদামি কাপড়ে  রঙ। খাবার চকচকে দেখার জন্য  চামড়া রাঙানোর রঙের ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। যা শরীরের জন্য মারাত্মক বিষ। খাবারে মেশানোর জন্য ফুড গ্রেড  নামে রঙ আছে। অবশ্য এর দাম কৃত্রিম রঙের তুলনায় আকাশ ছোঁয়া। চোখের খিদা মেটাতে আর অধিক লাভের জন্য  কমদামি কৃত্রিম রঙের  মারণানাস্ত্রে নিরাপরাধ মানুষের জীবন বিষিয়ে দিচ্ছে।  

ডায়াবেটিক রোগীর যেমন বেশি শর্করা বারণ, তেমনি বাত ব্যথায় ও আর্থাইটিসে শুধু লাল মাংশই নয় আমিষসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে শিমের বিচি, শাকের ডগা; এসপারাগাস/শতমূলী, পুঁই,  টমেটো  এমনকি শাকের রাজা পালংশাক নিষিদ্ধ। কলেরা, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মার মতো সংক্রামক এবং  আর্সেনিকোসিস, শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ, স্থূলতা, হার্ট ব্লকেজ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার প্রভৃতি অসংক্রামক রোগ থেকে জীবনাচরণ বদলিয়ে  সুস্থ থাকা যায়। খাবার  ও  জীনাচরণ  স্বাস্থ্যের  ওপর নানাভাবে প্রভাব ফেলে। দুধ প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাদ্য। বাচ্চা দেয়ার পর গবাদি প্রসূতির ওলানের শাল দুধ ফেলে দু-একদিন পরের দুধ বাচ্চাকে খাওয়নো হতো। এখন বলা হচ্ছে নবীন-শাবকের জন্য এ শাল দুধ  স্বাস্থ্যকর ও বেশ পুষ্টিকর। মানুষের বেলাতেও  তা সমভাবে প্রযোজ্য। পবিত্র কোরআনে পূর্ণ ২ বছর পর্যন্ত শিশুকে স্তন্যদানের  কথা বর্ণিত আছে (সুরা : ২, আল বাকারা; আয়াত-২৩৩/ সুরা :৩১, লুকমান; আয়াত :১৪)। গবেষণায় জানা গেছে, স্তন্যদানকারী মাতার সাথে সন্তানের সম্পর্ক  যেমন নিবিড় হয়, প্রজাতির পুষ্টি ও বর্ধনও  ঘটে আশানুরূপ। স্তন্যদানকারী মায়ের স্তন ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতার  হারও এবং গর্ভধানের সম্ভাবনাও কমে।
লাউ, কুমড়া, কাচকলা, পটোল তরিতরকারির খোসা রান্নার জন্য কাটাকুটির সময় ফেলে দেয় হয়। এতে পুষ্টি থাকে বেশি। ছোট করে তরকারি কুটায় এবং শাক ও তরকারি  কুটার আগে ধুলে ধোয়া পানির সাথে পুষ্টি চলে যায় না। অধিক হারে অনেকক্ষণ রান্নায় এবং ভাতের মাড় ফেলা ভালো নয়। টমেটো, গাজর, মুলা সালাদ হিসেবে কাঁচা খাওয়াই উত্তম। খোসাসহ আলু সিদ্ধ এবং খোসাসহ আপেল, পেয়ারা খেলে লাভ বেশি। শাক, কাঁচামরিচ প্রভৃতির আগা-ডগার দিকে পুষ্টি অধিক। চা সুস্বাদু করার জন্য চিনি, দুধ মেশানো কতটুকু ভালো তা ভাবা দরকার। লেবু একবার কাটলে অনেকক্ষণ খোলা বা আলোতে রাখলে ভিটামিন সি নষ্ট হয়। ফলের রস করে খাবার বদলে কামড়ে খাওয়া স্বাস্থ্যপ্রদ। গরম খাবার সাথে সাথে মুখবন্ধ পাত্রে ভরলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার; ফুড পয়জনিংজনিত বিষক্রিয়ায় ফলে কারখানায়, মজলিসে বা গণখাবার খেয়ে অনেকে অসুস্থ  হওয়া বা মৃত্যুর কারণ। ক্রমাগত শিল্প বর্জ্য ও  হেভি মেটাল বা ভারি ধাতু, কৃষি কাজের মাটি, নদী ও বদ্ধ জলাশয়ের পানি এবং নির্মল বায়ুকে বিষাক্ত করে তুলছে।  অনেক অসাধু  ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে  ট্যানারির হেভি মেটালযুক্ত বর্জ্য গবাদি ও পোলট্রি ফিডে মিশিয়ে বিক্রয় করছে। গরু সুস্থ ও মোটাতাজাকরণে মাছ আর হাঁস মুরগিক পুষ্ট রাখতে হরমোন, অ্যান্টিবায়েটিসহ এমনসব রাসায়নিক প্রয়োগ করছে। যার অক্ষয় ও অবশিষ্টাংশ খাদ্যচক্রের মাধ্যমে  মানবদেহে প্রবেশ করে, জমে জমে অনাকাক্সিক্ষত রোগের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। ব্যথানাশক ডাইক্লোফেনাক মানব দেহের জন্য বেশ ক্ষতিকর বিধায় নিষিদ্ধ। গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে ডাইক্লোফেনাক প্রয়োগ করা গবাদির মৃতদেহ খেয়ে শুকুনের ডিম নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ওরা বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় নাম লিখিয়েছে।  তাদের  জন্মহার বিলুপ্তর অন্যতম কারণ বিধায় এ ওষুধটি গবাধিপশুর জন্যও বর্তমানে নিষিদ্ধ।


 মেলা, জনসমাবেশ, রেল, সড়ক নৌপথে যাত্রাপথে  ঝাল মুড়ি, চানাচুর, সিদ্ধ ডিম, জিলাপি, কাটা শশা, আচারাদি খাবার ধুম পড়ে। এসব  পুরনো পত্রিকা, খাতার কাগজ, বইয়ের পাতার ঠোঙ্গায় পরিবেশন করা হয়। তাতে অখাদ্য ছাপার কালি এবং  জীবাণু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দেয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। তার সাথে প্রতারক ও ঠকবাজের যুক্তক্রিয়া তাকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলতে পারে। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে খাবার ও জীবনাচরণে সাবধানতা আবশ্যক। সাবধানের মার নাই।

কৃষিবিদ এ এইচ ইকবাল আহমেদ*
*পরিচালক (অব.), বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী। ০১৫৫৮৩০১৯০৮
ahiqbal.ahmed@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon